সুস্থতার পেছনে ব্যায়ামের অবদান

সুস্থতার পেছনে ব্যায়ামের অবদান

সুস্থতার পেছনে ব্যায়ামের অবদান

ব্যায়াম মানে শারীরিক কিছু ক্রিয়াকর্ম, যা আমাদের মানসিক সক্ষমতাকে স্বাভাবিক কিংবা কখনো কখনো বাড়াতে সহায়তা করে। সাধারণত মানব পেশির কর্মক্ষমতা বাড়াতে, অস্থির দৃঢ়তা রক্ষায়, রক্তসংবহন তন্ত্রের ক্রিয়াকর্ম স্বাভাবিক রাখতে, শারীরিক কসরতপূর্ণ খেলায় অধিক দক্ষতা আনয়ন, দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখতে অথবা অতিরিক্ত ওজন কমাতে আবার কখনো বা বিনোদনের অংশ হিসেবে ব্যায়ামের জুড়ি মেলা ভার। 

পরিমিত দৈনিক ব্যায়াম আমাদের দেহের সমগ্র কোষকলার স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক অক্সিজেন ও পুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করে। ফলে হূৎপিণ্ডসহ আমাদের সমগ্র রক্ত সংবহন তন্ত্র হয়ে উঠে আরো অধিক ক্রিয়াশীল। শ্বাসতন্ত্রের কাজে যুক্ত হয় নতুন মাত্রা। ফলে এই দুই তন্ত্রের আরো অধিক কার্যকারিতা বহু গুণ বাড়িয়ে দেয় আমাদের কাজের উৎসাহের মাত্রা।

নিয়মতান্ত্রিক ব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্ককে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণে উদ্দীপিত করে। মস্তিষ্ক কর্তৃক নিঃসৃত এসব রাসায়নিক পরবর্তী সময়ে আমাদের করে তুলে আরো সুখী ও কর্মক্ষম। বাড়িয়ে দেয় নিজের আত্মবিশ্বাস। এভাবেই নিয়মিত ও পরিমিত শরীরিক ব্যায়াম আমাদের বিষণ্নতা প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

দৈনন্দিন কাজকর্মে পরিশ্রম কম হলে নিয়মিত ব্যায়ামের দরকার। স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে বেশ শারীরিক পরিশ্রম হয়। সে জন্য গ্রামের কৃষক ভালোই থাকেন। সমস্যা হয় অফিসে চেয়ার–টেবিলে বসে সারাক্ষণ কাজ করলে। তাঁদের ব্যায়াম করতে হয়। সহনীয় মাত্রায় নিয়মিত ব্যায়াম করলে হার্টের দক্ষতা বাড়ে। হার্ট সুস্থ থাকে। প্রশ্ন হলো কতটা ব্যয়ামকে আমরা সহনীয় মাত্রার ব্যায়াম বলব? 

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। কারণ এটা নির্ভর করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির বয়স, হার্টের সুস্থতা প্রভৃতির ওপর। একটি বড় জরিপে দেখা গেছে, হার্ট ভালো রাখার জন্য কম কার্বোহাইড্রেট ও কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া দরকার। কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এরপর দরকার নিয়মিত ব্যায়াম। 

ব্যায়ামের পরিমাণ এমন হওয়া দরকার যেন সপ্তাহে অন্তত ১ হাজার ৬০০ ক্যালরি ব্যয় হয়। সুস্থ থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ২০০ ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করা দরকার। এই শক্তি দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যয় হয়। কিছু অবশিষ্ট থাকে। সেটা ব্যায়ামের মাধ্যমে ব্যয় না করলে স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে। বিশেষভাবে ওজন বেড়ে স্থূলতা দেখা দিতে পারে। এর ফলে অসুখ–বিসুখে পড়তে হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ও পরিমিত ব্যায়ামে হার্টের ছোটখাটো অসুস্থতা কমে যায়। অনেকের জন্য দিনে দুই থেকে তিন মাইল জোরে হাঁটাই যথেষ্ট ব্যায়াম। এর সঙ্গে প্রচলিত যোগব্যায়াম, বিশেষ করে স্ট্রেচিংসহ হালকা ব্যায়াম। শরীরের সব অস্থিসন্ধি, যেমন হাতের কবজি, ঘাড়, কোমর, হাঁটু, পায়ের গোড়ালি প্রভৃতি হালকাভাবে নাড়াচাড়া করা খুব দরকার, যেন অস্থি সংযোগস্থলগুলো সচল থাকে। এসব ব্যায়ামে দিনে ২৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। সকালে বা সন্ধ্যায় সময় করে নিতে হবে। বয়স্ক ব্যক্তিদের ৮–১০ মিনিটের ব্যায়ামও যথেষ্ট। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post