ভাইরাস শব্দটি জীববিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত হলেও আজকের এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এটি আর শুধু জীববিজ্ঞানের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে আমরা ভাইরাস শব্দটিকে আরো একটি জায়গায় ব্যবহার করি আর সেটা হলো কম্পিউটার ভাইরাস। ভাইরাস জিনিসটা আসলেই খুব মারাত্মক। তা সে মানুষের জন্যই হোক অথবা কম্পিউটারের জন্য! একবার সংক্রমণ হলে যেন সহজে পিছু ছাড়তে চায় না। আর কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রমণ হলে তো কথাই নেই। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবে পেতে হয় মুক্তি। তবে যদি শুরু থেকেই মানবদেহের ভাইরাসের ন্যায় কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কেও ধারণা থাকে তবে এ ঘাতক আক্রমনের থেকে অনেকটাই বেঁচে থাকা যায়। তাই আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানবো কম্পিউটার ভাইরাস কি, কম্পিউটার ভাইরাস সৃষ্টির ইতিহাস, কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার, বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়া কিছু কম্পিউটার ভাইরাস, কম্পিউটার ভাইরাস কীভাবে প্রবেশ করে, কম্পিউটার ভাইরাস কি করতে পারে এবং পরিশেষে কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়।
কম্পিউটার ভাইরাস কি?
কম্পিউটার ভাইরাস হল এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীর অনুমতি বা ধারণা ছাড়াই নিজে নিজেই কপি হতে পারে। মেটামর্ফিক ভাইরাসের মত তারা প্রকৃত ভাইরাসটি কপিগুলোকে পরিবর্তিত করতে পারে অথবা কপিগুলো নিজেরাই সয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। মানবদেহের ঘাতক ভাইরাসের ন্যায় একটি কম্পিউটার ভাইরাসও এক কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারে যেতে পারে কেবলমাত্র যখন আক্রান্ত কম্পিউটারকে স্বাভাবিক কম্পিউটারটির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। যেমন: কোন ব্যবহারকারী ভাইরাসটিকে একটি নেট ওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠাতে পারে বা কোন বহনযোগ্য মাধ্যম যথা ফ্লপি ডিস্ক, সিডি, ইউএসবি ড্রাইভ বা ইণ্টারনেটের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এছাড়াও ভাইরাসসমূহ কোন নেট ওয়ার্ক ফাইল সিস্টেম কে আক্রান্ত করতে পারে, যার ফলে অন্যান্য কম্পিউটার যা ঐ সিস্টেমটি ব্যবহার করে সেগুলো আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাসকে কখনো কম্পিউটার ওয়ার্ম ও ট্রোজান হর্সেস এর সাথে মিলিয়ে ফেলা হয়। ট্রোজান হর্স হল একটি ফাইল যা এক্সিকিউটেড হবার আগ পর্যন্ত ক্ষতিহীন থাকে।
কম্পিউটার ভাইরাস সৃষ্টির ইতিহাস
প্রোগ্রাম লেখার অনেক আগে ১৯৪৯ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ভন নিউম্যান কম্পিউটার ভাইরাস বিষয়ে আলোকপাত করেন।
তার স্ব-পুনরুৎপাদিত প্রোগ্রামের ধারণা থেকে ভাইরাস প্রোগ্রামের (তখন সেটিকে ভাইরাস বলা হতো না) আবির্ভাব। পুনরুৎপাদনশীলতার জন্য এই ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রামকে ভাইরাস হিসেবে প্রথম সম্বোধন করেন আমেরিকার কম্পিউটার বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বি কোহেন।
জীবজগতে যেমন ভাইরাস পোষক দেহে নিজেই পুনরুৎপাদিত হতে পারে। ভাইরাস প্রোগ্রামও নিজের কপি নিজেই তৈরি করতে পারে।
সত্তর দশকেই, ইন্টারনেটের আদি অবস্থা, আরপানেট (ARPANET)-এ 'ক্রিপার' ভাইরাস নামে একটি ভাইরাস চিহ্নিত করা হয়। সে সময় রিপার (Reaper) নামে আর একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়, যা ক্রিপার ভাইরাসকে মুছে ফেলতে পারত। সে সময় যেখানে ভাইরাসের জন্ম হতো সেখানেই সেটি সীমাবদ্ধ থাকত।
অবাক করা বিষয় হলো ১৯৮২ সালে এলক ক্লোনার (ELK CLONER) ফ্লপি ডিস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে, ভাইরাসের বিধ্বংসী আচরণ প্রথম প্রকাশিত হয় ব্ৰেইন ভাইরাসের মাধ্যমে যেটা প্রকাশ পায় ১৯৮৬ সালে। পাকিস্তানি দুই ভাই লাহোরে এই ভাইরাস সফটওয়্যারটি তৈরি করেন। এর পর থেকে প্রতিবছরই সারাবিশ্বে অসংখ্য ভাইরাসের সৃষ্টি হয়।
কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার?
কম্পিউটারের ভালো পারফরমেন্স এবং নিরাপত্তার জন্য আমাদের জানতে হবে কম্পিউটার ভাইরাসের ধরন কি এবং সেগুলো আমাদের কম্পিউটারে কিভাবে প্রবেশ করে? এবং এই ভাইরাসগুলি আমাদের কম্পিউটারে কতটা এবং কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে? তাহলে চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেই কম্পিউটার ভাইরাস এর প্রকারভেদ সম্পর্কে।
কম্পিউটার ভাইরাস অনেক ধরনের আছে, তার মধ্যে কিছু প্রধান ভাইরাসের তালিকা নিচে দেওয়া হল:-
- বুট সেক্টর ভাইরাস (Boot Sector Virus)
- ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাস (File Infector Virus)
- মাইক্রো ভাইরাস (Micro Virus)
- ট্রোজান – Trojans
- ম্যালাওয়্যার – Malware
- স্পাইওয়্যার – Spyware
- ব্রাউজার হাইজ্যাকার ভাইরাস (Browser Hijacker Virus)
- রেসিডেন্ট বা বাসিন্দা ভাইরাস (Resident Virus)
- পার্টিশন টেবিল ভাইরাস (Partition Table Virus)
- সরাসরি অ্যাকশন ভাইরাস (Direct Action Virus)
বুট সেক্টর ভাইরাস (Boot Sector Virus):
বুট সেক্টর ভাইরাস এমন একটি কম্পিউটার ভাইরাস, যা বিশেষ করে ফ্লপি ডিস্কের হার্ড ডিস্ক বা বুট সেক্টরের মাস্টার বুট রেকর্ড (MBR) কে সংক্রমিত করে। সিস্টেমের এই ভাইরাসগুলো মূলত রিমুভেবল মিডিয়ার মাধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে। আমাদের কম্পিউটার এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হলে, কম্পিউটার চালু করার সময় এই ভাইরাস আমাদের অপারেটিং সিস্টেম লোড হতে বাধা প্রদান করবে। আর অপারেটিং সিস্টেম লোড না হওয়ার কারনে আমাদের কম্পিউটার টি ওপেন হয় না। এই ভাইরাসটি কম্পিউটার থেকে অপসারণ করা অত্যন্ত কঠিন। সিস্টেম থেকে এই ভাইরাস রিমুভ করার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিস্টেমকে ফরম্যাট করতে হয়।
ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাস (File Infector Virus):
ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত সিস্টেমের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কারণ ভাইরাসের একটি বড় অংশ এই শ্রেণীর অন্তর্গত। যখন একটি নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম লোড হয়, তখন এই ভাইরাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে লোড হয়। এই ভাইরাস ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে ইমেইলের মাধ্যমেও প্রবেশ করতে পারে। কিছু ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাস প্রোগ্রাম ফাইলের সাথে সংযুক্ত থাকে, যেমন- .com, EXE ফাইল।
এই ভাইরাস আমাদের কম্পিউটার সিস্টেমের জন্য খুব ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ এই ভাইরাস খুব সহজেই আমাদের কম্পিউটারে সংরক্ষিত থাকা ফাইল বা ডেটা সংক্রমিত করতে পারে।
এই ভাইরাস আমাদের কম্পিউটারে উপস্থিত অ্যাপ্লিকেশন গুলোরও ক্ষতি করতে পারে। এই ভাইরাস এক্সিকিউটেবল ফাইলগুলিকে সংক্রমিত করতে পারে (যেমন- Sys, ovl, prg, এবং mnu ইত্যাদি)।
মাইক্রো ভাইরাস (Micro Virus):
মাইক্রো ভাইরাসগুলি বিশেষভাবে সফ্টওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন গুলোকে আক্রমন করে। মাইক্রো ভাইরাস বিশেষ করে মাইক্রো সফট অফিস অর্থাৎ ওয়ার্ড, ডকুমেন্ট, পাওয়ার পয়েন্ট, স্প্রেডশীটের মতো ফাইলগুলিকে ক্ষতি করে।
যখনই আমরা আমাদের সিস্টেমে মাইক্রো ভাইরাস সংক্রমিত সফটওয়্যারটি খুলি, তখন এই মাইক্রো ভাইরাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার কাজ শুরু করে দেয়। যার কারণে আমাদের কম্পিউটারে উপস্থিত থাকা অন্যান্য সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনগুলিও প্রভাবিত হয়। এই ভাইরাসটি সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ছড়ায়। অতএব, এই ভাইরাসটি যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমকেও সংক্রামিত করতে পারে (উইন্ডোজ, অ্যান্ড্রয়েড, ম্যাকওএস, আইওএস ইত্যাদি)।
ট্রোজান – Trojans:
এই ধরণের ভাইরাস বেশিভাগ সময় হ্যাকার (hacker) রা ছড়ায় এবং ইউজ করে থাকে। এই ট্রোজান ভাইরাস দ্বারা, হ্যাকাররা আমাদের কপম্পিউটারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রবেশ করে আমাদের অজান্তেই আমাদের পিসি তে থাকা পার্সোনাল এবং গোপন তথ্য চুরি করে নিতে পারে।
ম্যালাওয়্যার – Malware:
এই রকমের সিস্টেম virus তৈরি করা হয় মুলত আমাদের কম্পিউটারকে damaged (ক্ষতিগ্রস্থ) করার জন্য । এই ম্যালাওয়্যার বেশিরভাগ সময়, অন্য Computer বা ল্যাপটপ থেকে ফাইল কপি করার সময় অথবা infected usb device ইউজ করার মাধ্যমে আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে ছড়ায়।
স্পাইওয়্যার – Spyware:
স্পাইওয়্যার / spyware virus গুলির ব্যবহার করে, আমাদের কম্পিউটারের কার্যক্রম এবং ব্রাউজারের ব্যবহারের ওপর নজর রাখা হয়। এগুলি বেশিরভাগ সময় সরাসরি ইন্টারনেট থেকে আমাদের কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করে।
ব্রাউজার হাইজ্যাকার ভাইরাস (Browser Hijacker Virus):
আমরা প্রায় সবাই জানি যে, আজকাল ইন্টারনেট কতটা ব্যবহার হচ্ছে। আজকের যুগে, আমরা অনলাইনে সিনেমা দেখতে পছন্দ করি, অনলাইন গেম খেলতে এবং অনেক ধরনের ওয়েবসাইটে ঘুরাঘুরি করতে পছন্দ করি। যার কারণে আমাদের ডিভাইসে ভাইরাস প্রবেশের ঝুঁকি অনেকগুন বেড়ে যায়।
কিছু মানুষ তাদের আয় বাড়ানোর জন্য ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেয়। যখনই আমরা ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে একটি ইউআরএল প্রবেশ করি, ব্রাউজার হাইজ্যাকাররা আমাদের সেই ওয়েবসাইটে নিয়ে না গিয়ে অন্য সংক্রমিত ওয়েবসাইটে নিয়ে যায়। এইভাবে, যখন আমাদের ব্রাউজার এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হবে, তখন আমাদের ব্রাউজারে অনেক ধরনের অবাঞ্ছিত বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হবে।
রেসিডেন্ট বা বাসিন্দা ভাইরাস (Resident Virus):
রেসিডেন্ট বা বাসিন্দা ভাইরাস হলো এমন একটি ভাইরাস যা কম্পিউটারের RAM মেমোরিতে নিজেকে সংরক্ষিত রেখে সংক্রমণ কাজ পরিচালনা করে । কখনও কখনও এই ভাইরাসগুলি অ্যান্টিভাইরাসের সাথে যুক্ত হয়। বিভিন্ন ধরণের রেসিডেন্ট বা বাসিন্দা ভাইরাস রয়েছে এবং তারা বিভিন্ন উপায়ে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে কিছু ভাইরাস খুব দ্রুত কাজ করে এবং কিছু কিছু অনেক ধীরে কাজ করে থাকে।
রেসিডেন্ট ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কম্পিউটার সিস্টেমেও অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে কোন ডেটা অপারেট, শাট ডাউন এবং কপি-পেস্টে সমস্যা হয়। এই রেসিডেন্ট ভাইরাস চিনতে পারাটাও একটু কঠিন কাজ।
সরাসরি অ্যাকশন ভাইরাস (Direct Action Virus):
সরাসরি অ্যাকশন ভাইরাসকে অনাবাসিক ভাইরাসও বলা হয়। এই ভাইরাসটি সাধারণত এক্সটেনশান (যেমন- Com, EXE ইত্যাদি) দিয়ে ফাইলগুলিকে বেশি সংক্রমিত করে। একবার এই ভাইরাসটি আমাদের কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করলে, এটি আমাদের কম্পিউটারের মেমরিতে বা স্মৃতিতে লুকিয়ে থাকে।
এই ভাইরাসের বিশেষ বিষয় হল এই ভাইরাসগুলো তাদের উপর ক্লিক করে খোলা না পর্যন্ত এরা কার্যকরী হয় না। এই ভাইরাস একটি নির্দিষ্ট ধরনের ফাইলের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ভাইরাস আমাদের সিস্টেমের পাশাপাশি আমাদের ফাইলেরও ক্ষতি করতে পারে। যাইহোক, এটি স্বস্তির বিষয় যে এই ভাইরাসটি খুব বিপজ্জনক নয়, এটি অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামের সাহায্যেও রিমুভ করা যায় এবং এটি ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা এবং সিস্টেম পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করে না।
বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়া মারাত্মক কিছু কম্পিউটার ভাইরাস-
ভাইরাস জিনিসটা আসলেই খুব মারাত্মক। তা সে মানুষের জন্যই হোক অথবা কম্পিউটারের জন্য! একবার সংক্রমণ হলে যেন সহজে পিছু ছাড়তে চায় না। আর কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রমণ হলে তো কথাই নেই। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবে পেতে হয় মুক্তি। তাই আজকের এই লেখাটা সাজানো হয়েছে এযাবতকালের মারাত্মক দশটি কম্পিউটার ভাইরাসকে নিয়ে।
মেলিসা (Melissa):
১৯৯৯ সালে ডেভিড এল. স্মিথ নামক এক ব্যক্তি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ম্যাক্রো ভিত্তিক এই কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি করেন। তিনি এই ভাইরাসকে এমনভাবে তৈরি করেছিলেন যাতে একে সহজেই ইমেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া যায়।
মেলিসা ভাইরাস খুব সহজেই ইমেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ছিল এই ভাইরাস বহন করা ইমেইল ব্যবহারকারীকে সহজেই প্ররোচিত করতে পারত! ইমেইলের মেসেজটা ছিল এরকম-
“Here is that document you asked for, don’t show it to anybody else.”
পরবর্তীতে মেলিসার স্রষ্টা মি. স্মিথ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫,০০০ ডলার জরিমানা করে এবং সেই সাথে ২০ মাসের কারাদন্ড প্রদান করে। আদালত তাকে এটাও জানিয়ে দেয় যে, ভবিষ্যতে কখনোই আদালতের অনুমতি না নিয়ে তিনি কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবেন না!
যদিও মেলিসা ইন্টারনেটে বিস্তার ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম হয়নি, তবুও নিঃসন্দেহে বলা যায়, সাধারণ মানুষকে ভাইরাসের সাথে পরিচিত করে তোলার দায়িত্বটা বেশ ভালভাবেই সমাধা করেছিল।
দ্য ক্লেজ ভাইরাস (The Klez Virus):
এই ভাইরাসের আগমন ঘটে ২০০১ সালের শেষের দিকে। এর ভিন্নতা কয়েক মাস ধরে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের তটস্থ করে রেখেছিল। সাধারণত অন্যান্য ভাইরাসের মতো ক্লেজ ভাইরাসও কোনো কম্পিউটারকে আক্রমণ করত ইমেইল মেসেজের মাধ্যমে। তবে আরও কিছু ভিন্নতা ছিল এই ভাইরাসের। কিছু কিছু ক্লেজ ভাইরাস এমন ছিল যে এটি একটি কম্পিউটারকে অকার্যকর করে ফেলতে পারত! সংস্করণের ভিন্নতার সাথে সাথে ক্লেজ ভাইরাস সাধারণ কম্পিউটার ভাইরাসের মতো আচরণ করত কিংবা কখনো ওয়ার্ম অথবা ট্রোজান হর্স।
নিমডা (Nimda):
মোটামুটি নিশ্চিত হয়েই বলা যায়, ২০০১ সাল ছিল কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রমণের স্বর্ণালী সময়। নিমডা ভাইরাসেরও আবির্ভাব ঘটে ২০০১ সালে। নিমডা ভাইরাস এতোটাই দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল যে অন্যান্য ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার রেকর্ড ভাঙতে এটি সময় নিয়েছিল মাত্র ২২ মিনিট!
নিমডা ওয়ার্ম প্রথমদিকে ইন্টারনেট সার্ভারগুলোকে লক্ষ্য করে। কিছুক্ষণের ভেতরেই এটি বিভিন্ন উপায়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি ইমেইলও বাকি ছিল না!
সব থেকে বিপদজনক ব্যাপার ছিল কোড রেড-২ এর মতো এই ভাইরাসও তার শিকারের অপারেটিং সিস্টেমে একটি চোরাই দরজা খুলে দিত। আর এর মাধ্যমেই কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যেত ঐ ভাইরাসের আক্রমণের হোতা! সংক্রমিত কম্পিউটারের ঐ ইউজার যদি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মোডে থাকতেন, তাহলে পুরো কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণই পেয়ে যেত আক্রমণকারী।
এস কিউ এল স্ল্যামার:
২০০৩ সালের জানুয়ারিতে ইন্টারনেটে একটি নতুন ওয়েব সার্ভার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। অধিকাংশ কম্পিউটারই এই আক্রমণের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। এরই ফলশ্রুতিতে ‘ব্যাংক অব আমেরিকা’-এর এটিএম সার্ভিস ক্রাশ করা সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম মারাত্মক সমস্যার শিকার হয়। আর এসব সমস্যার পেছনের একমাত্র অপরাধী ছিল এস কিউ এল স্ল্যামার ভাইরাস। ধারণা করা হয়, এই ভাইরাসের কারণে আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি!
স্ল্যামারের প্রথম ইন্টারনেট সার্ভার আক্রমণের পরের কয়েক সেকেন্ডে সেকেন্ডে এটি তার শিকারের পরিমাণ দ্বিগুণ করে যাচ্ছিল। সার্ভার আক্রমণের ১৫ মিনিটের মধ্যেই ইন্টারনেটের প্রধান সার্ভারগুলোর প্রায় অর্ধেককে এটি তার শিকারে পরিণত করেছিল!
স্ল্যামার ভাইরাসের সব কার্যক্রমই খারাপ হলেও একটি ভালো শিক্ষা কিন্তু আমাদের ঠিকই দেয়। আপনার অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার যতই হালনাগাদ করা থাকুক না কেন, হ্যাকাররা কিন্তু সেগুলোর দুর্বলতা খুঁজে বের করতে কখনোই ভোলে না!
মাইডুম (MyDoom):
কোড রেড-২ বা নিমডার মতোই মাইডুম হলো আরেকটি কম্পিউটার ওয়ার্ম যা তার শিকারের কম্পিউটার থেকে চোর দরজা খুলে দিতে পারে। মাইডুম ভাইরাস মূলত দুই ধাপে ইন্টারনেটে এসেছিল। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি Denial Of Service (DoS) অ্যাটাক শুরু করে। আর দ্বিতীয় ধাপের মুক্তির কারণে এটির ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হয়। মাইডুমের ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হলেও আক্রমণের শিকার কম্পিউটারগুলোর চোর দরজা কিন্তু তখনো বন্ধ হয়নি!
ঐ বছরেই মাইডুমের দ্বিতীয় সংস্করণ সার্চ ইঞ্জিনগুলোর জন্য এক ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি করে। অন্যান্য ভাইরাসের মতোই মাইডুম কম্পিউটারে আক্রমণ করার পর সেই কম্পিউটার থেকে ইমেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করত যাতে সহজেই ছড়িয়ে পড়া সম্ভব হয়। কিন্তু এর সাথে সাথেই মাইডুম একটি সার্চ ইঞ্জিনে ঢুকে সার্চ করত। ফলশ্রুতিতে আক্রান্ত কম্পিউটারগুলো থেকে গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিন গুলো লক্ষ লক্ষ সার্চ রিকোয়েস্ট পেতে শুরু করে। এই অ্যাটাকের ফলে কিছু সার্চ ইঞ্জিন ধীরগতির হয়ে গিয়েছিল। আর বেশ কিছু সার্চ ইঞ্জিন তো ক্রাশই করে!
মাইডুমের ছড়ানোর মূল মাধ্যম ছিল ইমেইল ও পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক। সিকিউরিটি ফার্ম MessageLabs এর মতে, তখনকার প্রতি ১২টি ইমেইলের একটি মাইডুম ভাইরাস বহন করত!
স্যাসার ও নেটস্কাই (Sasser & Netsky):
অনেক সময়ই কম্পিউটার ভাইরাসের মূল হোতারা ধরা পড়েন না। কিন্তু যখন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ভাইরাসের উৎপত্তি খোঁজার রাস্তা পেয়ে যান, তখন তা ভাইরাসের স্রষ্টার জন্য বিপদজনক বটে। আর এমনটাই ঘটেছিল এই ভাইরাসগুলোর স্রষ্টা Sven Jaschen এর কপালে!
১৭ বছর বয়সী এই জার্মান কিশোর দুটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। দুটি ওয়ার্মের আচরণে তেমন কোনো মিলই ছিল না, কিন্তু মিল ছিল কোডিংয়ে। আর তা দেখেই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারেন ভাইরাস দুটি হলেও এর পেছনের কলকাঠি নাড়ছেন আসলে একজনই!
মাইক্রোসফট উইন্ডোজের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে স্যাসার ওয়ার্ম কম্পিউটারকে আক্রমণ করত। স্যাসারের একটি বিশেষত্ব ছিল। অন্যান্য ভাইরাসের মতো এটি ইমেইলের মাধ্যমে ছড়ানোর পরিবর্তে অন্য একটি কৌশল ব্যবহার করত। এটি প্রথমে একটি কম্পিউটারকে তার শিকার বানিয়ে অন্যান্য সিস্টেমের দুর্বলতার খোঁজ করত। তারপর ঐ সিস্টেমের সাথে সংযোগ স্থাপন করে সিস্টেমটিকে স্যাসার ডাউনলোড করাতে বাধ্য করতো। আর এভাবেই এক সিস্টেম থেকে অন্য সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়েছিল স্যাসার। স্যাসার একবার কম্পিউটারকে আক্রমণ করে ফেললে একে সাধারণভাবে বন্ধ করাও সম্ভব হতো না। বরং একমাত্র উপায় ছিল কম্পিউটারে পাওয়ার ক্যাবল খুলে ফেলা!
নেটস্কাই ভাইরাস অবশ্য ইমেইল আর উইন্ডোজ নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই ছড়ানোর কাজটা সেরে ফেলত। এটি ইমেইল ঠিকানাগুলিকে Spoof করত আর বংশবিস্তার করত ২২,০১৬ বাইটের একটি অ্যাটাচমেন্টের মাধ্যমে।
স্টর্ম ওয়ার্ম (Storm Worm):
২০০৬ সালের শেষের দিকে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এ ওয়ার্মের অস্তিত্ব টের পান। সাধারণ জনগণই একে স্টর্ম ওয়ার্ম নামে ডাকা শুরু করে। কারণ এই ভাইরাস সমেত পাঠানো একটি ইমেইলের সাবজেক্ট ছিল- ‘230 dead as storm batters Europe’। আর এ থেকেই এই ভাইরাসের নামকরণ হয়।
স্টর্ম ওয়ার্ম ছিল একটি ট্রোজান হর্স প্রোগ্রাম। এর কিছু সংস্করণ কম্পিউটারকে প্রায় একটি সয়ংক্রিয় রবোটে পরিণত করত! আর একবার আক্রান্ত হওয়া কম্পিউটার এই ভাইরাসের পেছনের ব্যক্তিকে আক্রান্ত কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পথ তৈরি করে দিত।
এছাড়াও স্টোর্ম ওয়ার্মের বিভিন্ন সংস্করণ বিভিন্ন খবর বা ভিডিও এর নকল লিংক দিয়ে ব্যবহারকারীকে বোকা বানাত। আবার মাঝেমধ্যে সাম্প্রতিক নকল ব্যাপারই থাকত ইমেইলের সাবজেক্টে। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকের ঠিক কিছুদিন এই ওয়ার্মের নতুন সংস্করণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ইমেইলের মাধ্যমে। এই ইমেইলগুলির সাবজেক্ট থাকত এরকম- ‘A new deadly catastrophe in China’ or ‘China’s most deadly earthquake.’ ভাবুন তো একবার, এরকম শিরোনাম দেখলে কার না ইচ্ছা করবে ইমেইলটি খুলে দেখতে!
ক্রিপ্টোলকার (Cryptolocker):
ক্রিপ্টোলকার হলো এক ধরণের র্যানসমওয়্যার। পাঠকদের অনেকেই হয়ত ‘র্যানসমওয়্যার’ শব্দটার সাথে বেশ পরিচিত। র্যানসমওয়্যার এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে এটি আপনার কম্পিউটার বা কম্পিউটারের ফাইলে আপনার এক্সেস ব্লক করে দেয়। এই ব্লক ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে যতক্ষণ না আপনি আক্রমণকারীর চাহিদা মতো মুক্তিপণ দিচ্ছেন।
ক্রিপ্টোলকারের আগমন ঘটে ২০১৩ সালে, ইমেইল অ্যাটাচমেন্টের মাধ্যমে। এটি সক্রিয় থাকাকালীন একটি কম্পিউটারের লোকাল ও নেটওয়ার্ক ড্রাইভ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফাইল এনক্রিপ্ট করে ফেলত। কম্পিউটারকে সংক্রমিত করার পর কম্পিউটারের পর্দায় অফার সম্বলিত একটি মেসেজ ভেসে উঠত। এটা হলো অর্থের বিনিময়ে ডাটা ফিরে পাওয়ার অফার। সোজা ভাষায়, কম্পিউটারকে জিম্মি করে ফেলাটাই ছিল ক্রিপ্টোলকারের প্রধান কাজ!
ক্রিপ্টোলকারকে অবশ্য কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলা খুবই সহজ ছিল। কিন্তু কঠিন ছিল ডাটা ফিরে পাওয়া! যেহেতু ফাইলগুলো আগে থেকেই এনক্রিপ্টেড ছিল, তাই ভাইরাস মুছে ফেলেও সেটা ডাটা পুনরুদ্ধারে খুব কাজে আসত না। ধারণা করা হয়, ২০১৪ সালে এর লাগাম টেনে ধরার আগে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছিল এর মূল হোতা!
আশা করি পাঠক এতক্ষণে বুঝতে পারছেন, এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকা কিন্তু সবসময় সঠিক নয়। কারণ হ্যাকাররা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করে কীভাবে একটি কম্পিউটারের দুর্বলতাকে কাজে লাগানো যায়। তাই এন্টিভাইরাস ব্যবহার-হালনাগাদের সাথে সাথে ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক থাকাটাও কম জরুরি নয়!
কম্পিউটার ভাইরাস কি করতে পারে?
কম্পিউটার ভাইরাস আমাদের কম্পিউটার সিস্টেমে উপস্থিত ডেটা, ফাইল, ফোল্ডার, ডকুমেন্ট মুছে বা নষ্ট করতে পারে। একটি কম্পিউটার ভাইরাস আমাদের কম্পিউটার সিস্টেমের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ভাইরাস আমাদের কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে সংরক্ষিত ডেটাও মুছে দিতে পারে। ইমেইলের মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারেও প্রভাব ফেলতে পারে এ ভাইরাস।
কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশের কারণ:
কম্পিউটারে ভাইরাসের অনেক উৎস থাকতে পারে, তাই আসুন আজ আমরা জেনে নেই যে কোন কোন প্রধান উৎস হতে আমাদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ভাইরাস আসে।
- একটি ডিভাইসকে অন্য ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমেও ভাইরাস প্রবেশ করে ।
- আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের অনুপস্থিতি।
- প্রোগ্রাম ডাউনলোড করা: যেসব প্রোগ্রামে ডাউনলোডযোগ্য ফাইল রয়েছে সেগুলি ম্যালওয়্যারের সবচেয়ে কমন উৎস, যেমন ফ্রিওয়্যার এবং অন্যান্য এক্সিকিউটেবল ফাইল।
- পাইরেটেড বা ক্র্যাক করা সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
- ব্লুটুথ এর মাধ্যমে ফাইল ট্রান্সফার করলে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে
- ইন্টারনেট এর মাধ্যমে
- ইমেইলে সংযুক্ত থাকা ফাইলের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াতে পারে
- নরমাল সাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করার মাধ্যমেও ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে
- অজানা বা প্রতারণামূলক ইমেইলে সংযুক্ত থাকা লিঙ্ক ওপেন করলে ইত্যাদি...
কম্পিউটার ভাইরাস প্রতীরোধের উপায়:
আমাদের কম্পিউটার virus দ্বারা আক্রান্ত হলে কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কম্পিউটার বার বার হ্যাং হওয়ার মত সমস্যা দেখা যায়। যার কারনে আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। আর এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের ভাইরাস প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে।
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা জানবো ভাইরাস থেকে বাঁচার কিছু উপায় সম্পর্কে। আমাদের বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে অনেকটাই নিরাপদ রাখতে পারবেন আশা করছি।
- আপনি আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে একটি খুব ভাল অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করুন এবং নিয়মিত এটি আপডেট করতে থাকেন। আপনি যদি বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাহলে আপনি প্রিমিয়াম অ্যান্টিভাইরাসও ব্যবহার করতে পারেন।
- অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী রয়েছে। অতএব, বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, বিশেষ করে যেসব ওয়েবসাইট নিরাপদ নয় (http) সেগুলো ব্যবহার থেকে।
- যে সাইট গুলো জনপ্রিয় এবং নিবন্ধিত নয়, সেই সকল ওয়েবসাইট ভিজিট না করাই সবচেয়ে ভালো হবে।
- পেনড্রাইভ, ফোন, ডিস্ক বা যে কোন এক্সটারনাল ডিভাইস পিসি তে ব্যবহার করার আগে তা অবশ্যই স্ক্যান করুন
- আপনার কম্পিউটার সিস্টেমকে নির্দিষ্ট সময় পরে পরে অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করতে থাকুন।
- যদি আপনার কোন ইমেইল প্রেরক সম্পর্কে কোন তথ্য না থাকে, তাহলে এই মেইল খুলবেন না। বিশেষ করে মেইলে থাকা কোন লিঙ্কে ক্লিক করবে না ।
- অননুমোদিত ওয়েবসাইট থেকে কিছু ডাউনলোড করবেন না। যেমন- কোন মুভি, এমপি থ্রি বা সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি।
- ডাউনলোড করা জিনিসটি সঠিকভাবে স্ক্যান করে নিন। কারণ এগুলোর মধ্যে ভাইরাসের ঝুঁকি অনেক বেশি।
আশাকরছি উপরে বর্ণিত বিষয়াদি যথাযথভাবে অনুসরণ করে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করলে আমরা কম্পিউটার ভাইরাস নামক বর্তমান শতাব্দীর এক ভয়ংকর ঝুঁকি থেকে বেঁচে থাকতে পারবো।
আজ এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানলাম কম্পিউটার ভাইরাস কি, কম্পিউটার ভাইরাস সৃষ্টির ইতিহাস, কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার, বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়া কিছু কম্পিউটার ভাইরাস, কম্পিউটারে ভাইরাস কীভাবে প্রবেশ করে, কম্পিউটার ভাইরাস কি করতে পারে এবং পরিশেষে কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়। এর আগের আর্টিকেল টিতে আমরা কম্পিউটার সম্পর্কিত মজার কিছু তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। যারা আর্টিকেল টি পড়তে আগ্ৰহী তারা এখানে ক্লিক করুন।
ধন্যবাদ