আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর তার মস্তিষ্ক কী করা হয়েছিল ?

আইনস্টাইনের ব্রেইন


শিশু আইনস্টাইনের বিচিত্র চরিত্রকে সেই দিন উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি তার অভিভাবক, তার শিক্ষকদের। স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে মাঝে মাঝেই অভিযােগ আসত। পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়া ছেলে অমনােযােগী আনমনা। ক্লাসের কেউ তার সঙ্গী ছিল না। সকলের শেষে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতেন। শুধু তার একমাত্র সঙ্গী তার মা। তার কাছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের নানান সুর শােনেন। আর বেহালায় সেই সুর তুলে নেন। এই বেহালা ছিল আইনস্টাইনের আজীবন কালের সাথী।

আইনস্টাইনের প্রসঙ্গ আসলেই আমরা তার জীবনের মজার মজার দিক নিয়ে আলোচনা করি। যেমন তিনি খুব সুন্দর বেহালা বাজাতে পারতেন, মাঝে মাঝে বাসার ঠিকানা ভুলে যেতেন, শেইভ করতেন সাবান দিয়ে। আবার আমরা ব্যপক অর্থে মেধাবী মানুষকে বুঝাতে আইনস্টাইন বিশেষনটি ব্যবহার করি। তবে আমরা কি আদৌ জানি, মৃত্যুর পর এই কিংবদন্তির মস্তিষ্ককে কী করা হয়েছিল?

সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় একজন ছিলেন আইনস্টাইন। তার মেধার উৎস জানার জন্য তার মৃত্যুর সাড়ে সাত ঘণ্টা পর তার মস্তিষ্কটি মৃত দেহ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, ১৯৫৫ সালে আইনস্টাইনের মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর তার মস্তিষ্ক আলাদা করে এর একটি বড় অংশ সংরক্ষণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ও গবেষক টমাস হার্ভে। তিনি গবেষণার জন্য ওই মস্তিষ্কের কিছু অংশ পাতলা টুকরো করেন। ২০১০ সালে ১৪টি স্বতন্ত্র ছবিসহ আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের বাকি অংশ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব হেলথ অ্যান্ড মেডিসিনে দান করা হয়।

আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর তার মস্তিষ্ক কী করা হয়েছিল

গবেষণায় দেখা যায়, আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের কর্পাস কোলোসাম অংশ অন্যদের তুলনায় বেশ মোটা ছিল। কর্পাস কোলোসাম বিপুল পরিমাণ স্নায়ু গুচ্ছের সমন্বয়ে গঠিত হয় যার ফলে মস্তিষ্কের ডান ও বাম অংশের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। এই অংশটি সুগঠিত হওয়ায় আইনস্টাইন চিন্তাভাবনায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন।

কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, আইনস্টাইন সৌভাগ্যবান তাই তার মস্তিষ্ক সাধারণ মানুষের চেয়ে উন্নত। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, যে কোনো মানুষ মস্তিষ্কের কাজ বেশি বেশি চর্চার মাধ্যমে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।

আইনস্টাইন সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভালোবাসতেন তাই মাথা খাটাতেন প্রচুর। এই কারণেই তার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার গবেষণার একটি বড় অংশ ছিল থট এক্সপেরিমেন্ট। বিষয়টা অনেকটাই শরীর চর্চার মতো।

আপনি যদি নিয়মিত শরীর চর্চা করেন তাহলে আপনার পেশী সুগঠিত হবে। বিবর্তন অকারণ রিসোর্স খরচ করা নিরুৎসাহিত করে। আপনার যদি ভারী কাজ করার প্রয়োজন না হয় তাহলে আপনার পেশী সুগঠিত হবে না। কারণ বেশি মাংসপেশি মানেই বেশি শক্তির চাহিদা।

আপনার শরীরে যখন মাংস পেশী বাড়ছে তখন আপনার ক্যালরির চাহিদাও বাড়ছে তাই খাদ্য অপ্রতুলতার যুগে এই বৈশিষ্ট্যটি প্রাণীদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। মস্তিষ্কের সুগঠনের জন্যও তাই মস্তিষ্ক চর্চা করতে হয়।

অনেকভাবেই আপনি মস্তিষ্কের চর্চা করতে পারেন। যেসব কাজে মাথা খাটানোর প্রয়োজন হয়। যেমন: পাজল খেলা, গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা ইত্যাদি। পাশাপাশি আরো বেশ কিছু কাজের মাধ্যমে মস্তিষ্কের দক্ষতা বাড়তে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সঙ্গীত চর্চা। গবেষণায় দেখা গেছে, সঙ্গীত চর্চা বিশেষ করে কোনো একটি বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সময় আপনার মস্তিষ্কের বিশাল অংশ কাজে নিয়োজিত থাকে। তাই এই বিষয়টি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারে।

আইনস্টাইন নিজে একজন বেহালা বদক ছিলেন এবং এই অভ্যাসটিও তার উন্নত মস্তিষ্কে প্রভাব তৈরি করেছে বলে ধারনা করা হয়। এ ছাড়া আমাদের শরীরের ডান অংশ নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের বাম লোবের মাধ্যমে এবং বাম অংশ নিয়ন্ত্রিত হয় ডান অংশের মাধ্যমে। ফলে আমরা যদি শরীরের একটি অংশই বেশি ব্যবহার করি তাহলে মস্তিষ্কের একটি অংশ ব্যবহার হয় কম। এই কারণে কাজের ক্ষেত্রে শরীরের উভয় পাশের বেশি ব্যবহারের মাধ্যমেও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ানো যায়। যেমন, কোনো একটি কাজ উভয় হাতের মাধ্যমে করার চর্চা করা যেতে পারে বা এমন কিছু করা যেতে পারে যাতে উভয় হাতেরই ব্যবহার করা প্রয়োজন।

তবে সার্কাসের জাগলিং জাতীয় কসরত এই ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে, কিংবা গীটার জাতীয় বাদ্যযন্ত্র বাজানো যেতে পারে, এতে দুই দিক থেকেই মূলত মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে।

Post a Comment

Previous Post Next Post