বাংলাদেশের সবচেয়ে রহস্যময় ৫ টি স্থান | Top 5 mysterious places in Bangladesh

বাংলাদেশের সবচেয়ে রহস্যময় ৫ টি স্থান

বাংলাদেশের সবচেয়ে রহস্যময় ৫ টি স্থান (Top 5 mysterious places in Bangladesh): 

আমাদের এই প্রকৃতি রহস্যকে পছন্দ করে। আর তাই নিজেকে সে আগলে রাখে নানা ধরনের রহস্য দিয়ে। কিছু রহস্যের সমাধান মানুষ করতে পারে। কিছু রহস্য অমীমাংসিতই থেকে যায়। 

প্রাচীনকাল থেকে রহস্যের প্রতি মানুষের রয়েছে দূর্নিবার আগ্ৰহ , আর এই আগ্রহের সূত্র ধরে একদিকে যেমন রহস্য ঘেরা পৃথিবীর অনেক অজানা বিষয় আমাদের কাছে আজ পরিষ্কার হয়েছে তেমনি অনেক কিছুই রয়ে গেছে আগের মতোই ব্যাখ্যাহীন। তবুও রহস্য পাগল মানুষেরা প্রতি মূহুর্তে অদম্য নেশায় সকল রহস্যের নৈপথ্যের কারণ অনুসন্ধ্যানে মেতে রয়েছেন। আমরা অনেকেই হয়তো পৃথিবীর দূর দূরান্তে থাকা অনেক রহস্যময় স্থান সম্পর্কে শুনেছি। আর কারো কারো তো এসব স্থান নিজ চোখে দেখার সৌভাগ্যও হয়েছে, তবে আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে আমাদের বাংলাদেশেও এমন রহস্যময় স্থান আছে কি না? অনেকেই হয়তো কখনো ভাবিনি আবার অনেকেই হয়তো ভেবেছি। তবে আমি যদি বলি এমন একটি দুটি নয় অসংখ্য রহস্যময় স্থান রয়েছে আমাদের এই দেশে যা দেখে অবাক হতে বাধ্য আমরা সকলেই। তবে আজ আমরা ঐ সকল রহস্যে ঘেরা স্থান সমূহ হতে ৫ টি এমন স্থান সম্পর্কে জানবো যেটা এর আগে হয়তো আমাদের অনেকেরই জানার সৌভাগ্য হয়নি। তাহলে চলুন জেনে নিই বাংলাদেশের রহস্যময় ৫ টি স্থান সম্পর্কে -


 
গানস অব বরিশাল

গানস অব বরিশাল

বরিশাল গানস বা গানস অব বরিশাল বলতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বরিশাল এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘটা বিকট কিছু শব্দকে বোঝায়। এ ধরনের অব্যাখ্যেয় শব্দগুলোকে একত্রে বলা হয় মিস্টপুফার্স।

ব্রিটিশ শাসনামলে বাকেরগঞ্জ হিসাবে পরিচিত বরিশালের তৎকালীন ব্রিটিশ সিভিল সার্জন প্রথম ‘গানস অব বরিশাল’ ঘটনাটি প্রকাশ করেন। প্রতি বর্ষার শুরুতে অক্টোবর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গভীর সাগর থেকে কামান দাগার আওয়াজ আসতো আর তখন ব্রিটিশরা মনে করতেন কোন জলদস্যু আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু প্রতিবার অনেক খোঁজাখুজি করেও জলদস্যুর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে এক বা একাধিক কামান দাগার বিকট শব্দগুলো বেশি শোনা যেত। কোথা হতে এই অদ্ভুত কামানের শব্দ আসতো সেই রহস্য আজও কেউ ভেদ করতে পারেনি। জনপ্রিয় কবি সুফিয়া কামাল তাঁর আত্মজীবনীতেও এই কামানের শব্দের কথা লিখে গেছেন। তবে ১৯৫০ সালের পর থেকে এই রহস্যময় কামান দাগার শব্দ আর শোনা যায়নি।


লালবাগ কেল্লার সুড়ঙ্গ

লালবাগ কেল্লার সুড়ঙ্গ

লালবাগ কেল্লার নিচে রয়েছে অসংখ্য সুড়ঙ্গ যা জমিদার আমলে তৈরি করা হয়েছিল। সুড়ঙ্গগুলোর মধ্যে একটি সুড়ঙ্গ আছে যার ভেতরে কেউ ঢুকলে তাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না। স্থাপত্যবিদদের মতে, এ পথটি প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে টঙ্গী নদীর সঙ্গে যুক্ত। আবার কেউ মনে করে, এটি একটি জলাধারের মুখ।

লালবাগ কেল্লা নিয়ে মানুষের মুখে মুখে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। বিশেষ করে লালবাগ কেল্লার সুড়ঙ্গ সম্পর্কিত আলোচনা বহুল প্রচলিত। ধারনা করা হয় জমিদারদের বিপদ থেকে বাঁচার শেষ উপায় হিসাবে এই সুড়ঙ্গটি ব্যবহার করা হত। এই সুড়ঙ্গের বিশেষ রহস্য হল, একবার এখানে প্রবেশ করলে আর ফিরে আসা যায় না অর্থাৎ এই সুড়ঙ্গে প্রবেশকারীকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। লালবাগ কেল্লার সুড়ঙ্গের ভেতর খুবই অন্ধকার, সাধারণ টর্চের আলো এখানে কোন কাজে আসে না। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে লালবাগ কেল্লার সুড়ঙ্গটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যার কারণে এখনো রহস্যময় হয়েই থেকে গেল লালবাগ কেল্লার এই সুড়ঙ্গ।


বগা লেক

বগা লেক

বান্দরবান জেলা শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে রুমা উপজেলাস্থ কেওক্রাডং পর্বতের কাছে অবস্থিত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার শান্তজলের হ্রদ বগা লেক ভূ-তত্ত্ববিদগণের মতে প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রাকৃতিক ভাবে পাহাড়ের চূড়ায় এই লেক তৈরি হয়। আর এই লেক কে ঘিরে বসবাসকারী ‘বম’ উপজাতিরা বিশ্বাস করেন অনেক আগে এখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের খেয়ে ফেলা ড্রাগন বাস করতো। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে গ্রামের লোকেরা ড্রাগনকে হত্যা করলে ড্রাগনের মুখ থেকে প্রচণ্ড আগুন বের হয়ে পাহাড়কে বিস্ফোরিত করে আর তা থেকেই জন্ম নেয় এই লেক। বম ভাষার শব্দ বগা অর্থ ড্রাগন। রুমা উপজেলা পরিষদের লাগানো সাইনবোর্ডে বগা লেকের এমন রহস্যের কথাই লিখা রয়েছে। আজ পর্যন্ত বগা লেকের গভীরতা নির্ণয় সম্ভব হয়নি। আবার প্রতিবছর অজানা এক কারণে এই লেকের পানির রঙ বদলে যায় যা আজো এক অমিমাংসিত রহস্য।


সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড

মেঘনা নদী আর সাগরের মিলিত হওয়ার জায়গা বা মোহনাকে উপনিবেশ শাসনামলে ব্রিটিশরা সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড বা অতলস্পর্শী নামকরন করেন। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের উৎপত্তি নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। অবশ্য সাধারণভাবে মনে করা হয়ে থাকে যে, নিম্ন সমুদ্রপৃষ্ঠে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীর পললের স্তূপ সরাসরি মহীসোপান প্রান্তে নির্গত হয়েছে। সোপান প্রান্ত ও সোপান প্রান্তের ঊর্ধ্ব ঢালে উৎপন্ন ঘোলাটে স্রোত ও নদী-প্রবাহের সম্মিলিত প্রভাব সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড গঠনের জন্য দায়ী। তৎকালীন ব্রিটিশদের মতে সমুদ্রের এই জায়গাটির কোন তল বা সীমা নেই। অনেকে আবার সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাদ বলে মনে করেন। প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার বছর পূর্বে তৈরি হওয়া এই সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড এর গভীরতা পরিমাপ করা আজো সম্ভব হয়নি। যা কোনদিন সম্ভব হবে কিনা সেটাই এক রহস্য।


চলন বিল

চলন বিল

নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত চলন বিল দেশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে সমান আকর্ষণীয় একটি দর্শনীয় স্থান। তিন জেলা জুড়ে চলন বিলের বিস্তৃতি হলেও সিরাজগঞ্জ অংশ নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে বেশকিছু ভুতুড়ে গল্প, যা চলন বিল ভ্রমণে পর্যটকদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে তোলে। জানা যায় সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াস উপজেলায় অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী জমিদার কোন এক অজ্ঞাত কারণে হঠাৎ করে মারা যান। জমিদারের মৃত্যুর রাতেই এখানে তিনটি মন্দির গড়ে উঠে এবং মন্দিরগুলো পর দিনই আপনা আপনি ভেঙ্গে যায়। এরপর থেকে স্থানীয় লোকজনের সাথে ঘটে যাচ্ছে বিভিন্ন রহস্যময় ঘটনা।

Post a Comment

Previous Post Next Post